০৩ মে ২০২১, ১৬:০২

শিক্ষার্থী ভিসাকে বিশেষ সেবা বিবেচনার দাবি

জার্মানিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

লকডাউন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী ভিসাকে জরুরি ও বিশেষ সেবা বিবেচনায় নিয়ে ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতি বছর হাজারো মেধাবী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইউরোপের অন্যতম শিক্ষা সহায়ক দেশ জার্মানিতে যাত্রা করে। উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম শেষে দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে স্বদেশে ফিরে এসে এ সকল শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী আলোয় বিকশিত করে আমাদের দেশকে। দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাসে ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত হওয়ায় এবং লকডাউনের প্রভাবে দূতাবাস অফিসে শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ১ বছরে সহস্রাধিক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী জার্মানির বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে গত ৩ সেমিষ্টার (সামার ২০২০, উইন্টার ২০২০/২১, সামার ২০২১) অনলাইনে ক্লাস করছে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জরিপ অনুযায়ী)। ইতোমধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই ব্যাংক একাউন্টের ১১ লাখ টাকা জমা রেখেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অনেকেই কয়েক লক্ষাধিক টাকা টিউশন ফিও জমা দিয়েছে। তাই, সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ভিসা সাক্ষাৎকার ও ভিসা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় থাকলেও লকডাউনের পূর্বে খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীই দূতাবাস হতে তাদের ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে কিন্তু সাম্প্রতিক লকডাউন আরোপের কারনে অধিকাংশেরই ভিসা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জার্মানিতে গত ৩ সেমিস্টার অনলাইন ভিত্তিক পাঠ্যক্রম পরিচালিত হলেও আগামী সেমিস্টার থেকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায়, সর্বাত্মক স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাসের কার্যক্রম পরিচালিত না হলে যথাসময়ে ভিসা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলস্বরূপ, বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসন হতে শিক্ষর্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায়, হুমকির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ও ক্যারিয়ার। 

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জানান, জার্মানিতে শিক্ষা ব্যবস্থা থিওরি, প্র্যাকটিক্যাল ও ইন্টার্নশিপের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থিওরি ক্লাস অনলাইনে পরিচালিত হলেও প্র্যাকটিক্যাল এবং ওয়ার্কশপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে ইন্টার্নশিপে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই, শুধুমাত্র থিওরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ একেবারেই ক্ষীণ। তাই শিক্ষার্থীগণের বেশিরভাগ বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার সুযোগ না থাকায় রিসার্চভিত্তিক অধ্যয়ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র ভিসা জটিলতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে, ইন্টারনেট কানেকশনের সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস লেকচার যথাযথভাবে বুঝতে পারছে না। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রেজেন্টেশন ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মেটরি এবং স্বাস্থ্য বীমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা বাংলাদেশ থেকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে তারা প্রাপ্ত সুবিধাদি ভোগ করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ভিসা সংক্রান্ত স্বাক্ষাৎকার পাওয়ার বিষয়ে ক্রমাগত অনিশ্চয়তা এবং বিলম্বের কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

“সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ সরকার এবং জার্মান দূতাবাসের প্রতি একটাই দাবি লকডাউন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী ভিসাকে জরুরি ও বিশেষ সেবা বিবেচনায় নিয়ে ভিসা কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং গবেষণা কার্য চলমান রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আকরাম, নাজিম উদ্দিন, রায়ানুল ইসলাম, রাফি আহমেদ, শরীয়ত উল্লাহ টিটু, কিশোর কুমার দেবনাথ, সুমি আক্তার প্রমুখ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: বিদেশে পড়ার স্বপ্ন, মুখের হাসি কেড়ে নিচ্ছে করোনা